উত্তরাধিকারী বনাম নমিনির সম্পত্তির অধিকারের উপর গুরুত্বপূর্ণ নিয়মাবলী

একজন মালিকের মৃত্যুর পর, সম্পত্তির অধিকার কি মনোনীত ব্যক্তি /নমিনিকে নাকি সম্পত্তির উত্তরাধিকারীকে হস্তান্তর করা হবে? বম্বে হাইকোর্ট থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ের পরে, আমরা এই সমস্যার বর্তমান আইনি স্থিরতা কি তা অনুসন্ধান করি

একটি আইনি প্রশ্ন বিভিন্ন আদালতের সামনে পরীক্ষার সময়ে এবং পুনরায় রাখা হয় যে , নমিনির অধিকার, মনোনয়নের বিভিন্ন বিষয় যেমন আর্থিক উপকরণ, একটি  সমবায় সমিতির শেয়ার ইত্যাদির সম্পর্কে, উত্তরাধিকারীগণের চেয়ে বেশি কিনা।

বিচারপতি ওক ও বিচারপতি সৈয়দের সমন্বয়ে গঠিত বম্বে হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ (যুগ্ম- বিচারপতি বেঞ্চ), সম্প্রতি নমিনিদের থেকে  উত্তরাধিকারীদের অধিকার বেশি, তা সমর্থন করে। আদালত বলেছে যে, যতদিন না মৃত ব্যাক্তির বৈধ উত্তরাধিকারী বা আইনগত প্রতিনিধি উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে পারেন ,যেমন  মৃত ব্যক্তির উইলের প্রবেট বা মৃতের সম্পত্তির প্রশাসনের চিঠি পাওয়া , যা তাদের অধিকার দাবি করার জন্য প্রয়োজন, ততদিন মনোনয়নের বিষয়টিকে সুরক্ষিত কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য নমিনিদের নিযুক্ত করা হয়।

 

নমিনি এবং উত্তরাধিকারীদের অধিকারগুলির উপর পরস্পরবিরোধী  সিদ্ধান্ত

অতীতে কিছু পরস্পরবিরোধী পর্যবেক্ষণ দেখা দিয়েছিলো। এই ধরনের একটি মামলার ক্ষেত্রে (হর্ষ নীতিন কোকাটে ও সারস্বত সমবায় ব্যাংক লিমিটেড, যেটি ‘কোকাটে মামলা’ নামেও পরিচিত), বম্বে হাইকোর্টের একজন একক বিচারক  রায় দিয়েছিলেন যে, কোন কোম্পানির শেয়ারের ক্ষেত্রে, নমিনির অধিকার উত্তরাধিকারীদের অধিকার থেকে বেশি হবে। বম্বে হাইকোর্টের অন্য একটি একক বিচারকের রায়ে পরবর্তীকালে এর বিপরীত কথা সমর্থন করে, মানে তাতে উত্তরাধিকারীদের পক্ষে রায় দেওয়া হয়েছে I যাইহোক, একজন একক বিচারকের পারদর্শিতার সাথে অপর একক বিচারকের  ফলাফল পর্যালোচনা করে একটি বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল, যা নিয়ে বোম্বে হাইকোর্টের যুগ্ম- বিচারপতি বেঞ্চের সামনে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল।

 

অপর একটি সাম্প্রতিক রায়ে ইন্দ্রানী ওয়াহি বনাম রেজিস্ট্রার অফ কো-অপারেটিভ সোসাইটিস এন্ড আদার্স (‘ইন্দ্রানী ওয়াহি কেস’), সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গ কো-অপারেটিভ সোসাইটিস অ্যাক্ট, 1983 (‘পশ্চিমবঙ্গ আইন’) এর অধীনে মনোনয়নপত্রের নিয়মাবলী বিবেচনা করে, যার মধ্যে, সমবায় সমিতিকে  এই ধরনের সদস্যের আগ্রহে নমিনির নামে শেয়ার হস্তান্তর করতে হয়। সুপ্রীম কোর্টের সিদ্ধান্ত এই ছিল যে, পশ্চিমবঙ্গ অ্যাক্টের অধীন একটি সমবায় সমিতি, তার সদস্য দ্বারা গঠিত মনোনয়ন দ্বারা আবদ্ধ। সুতরাং,সদস্যের মৃত্যুর পর, মনোনয়নের ক্ষেত্রে, নমিনির নামে শেয়ার গুলি কে হস্তান্তর করা ছাড়া সমবায় সমিতির কাছে কোন বিকল্প নেই।

 

নমিনির অধিকারের উপর বোম্বে হাইকোর্টের নির্দেশ

বোম্বে হাইকোর্টের যুগ্ম বিচারপতির বেঞ্চ কোম্পানি আইন, 1956 (1956 আইন) এর অধীনে শেয়ারের মনোনয়ন পরিচালনার আইনগুলি বিবেচনা করে , ভারতীয় উত্তরাধিকার আইন 1925 এবং ডিপোসিটরিস অ্যাক্ট 1996 এর অধীনের আইন অনুযায়ী,অকৃত উইলকারী(কোনো উইল বানানো ছাড়া) বা উইলকারী উত্তরাধিকারী  (একটি উইলের অধীন দানকৃত সম্পত্তি ) উভয়ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি উত্তরাধিকার আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে এবং উপসংহারে বলা যায় যে মনোনয়ন সম্পর্কিত বিধানগুলি এবং নিয়মকানুনের বা অকৃত উইলের উত্তরাধিকারের সাথে সম্পর্কিত আইনকে অগ্রাহ্য করবেন না। 1956 অ্যাক্টের মতো, কোম্পানি অ্যাক্ট 2013 (2013 অ্যাক্ট) তেও একই বিধান রয়েছে  এবং সেইজন্য, এই রায় 2013 অ্যাক্টের অধীনে উদ্ভূত ভবিষ্যতের সকল কেসে স্পষ্টতই প্রয়োগ করা হবে।

এই রায়টিতে, একটি কোম্পানির শেয়ার,একটি সমবায় সমিতির শেয়ার, বিভিন্ন অর্থসংস্হানে বিনিয়োগ যথা-কর্মচারী প্রভিডেন্ট ফান্ড, সরকারি সঞ্চয়পত্র এবং ব্যাংকের সাথে থাকা বিভিন্ন  অ্যাকাউন্টের সম্পর্কে নমিনির অধিকার ইত্যাদির ক্ষেত্রে সুপ্রীম কোর্ট এবং বিভিন্ন হাইকোর্টের নমিনির অধিকার বনাম উত্তরাধিকারীর অধিকার সম্পর্কীত উদাহরনের উল্লেখ রয়েছে। বম্বে হাইকোর্ট লক্ষ্য করেছে যে এই সমস্ত ক্ষেত্রে, মনোনয়ন সংক্রান্ত বিধানগুলিতে, এধরনের দলিলের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলির অন্তর্বতী ব্যবস্থাপনায়, নমিনিদের শুধুমাত্র অস্থায়ী নিয়ন্ত্রন অধিকার দেবার জন্যই ক্রমাগতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

এমনকি ইন্দ্রানী ওয়াহি মামলায়ও, আদালতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নমিনির পক্ষে শেয়ার হস্তান্তরের  প্রয়োজন শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ অ্যাক্টের অধীনে নিবন্ধিত/ রেজিস্টার্ড সমিতিগুলির জন্য নির্ধারিত এবং কোনও সময়েই সুপ্রীম কোর্ট এই সিদ্ধান্ত নেননি যে নমিনিদের অধিকার উত্তরাধিকারীদের অধিকারের তুলনায় বেশি হবে। ইন্দ্রানী ওয়াহি মামলায়, সুপ্রীম কোর্ট জানিয়েছে যে, মৃত ব্যক্তির পরিবারের অন্যান্য সদস্যগণও  উত্তরাধিকারসূত্রে তাদের মামলা প্রত্যাহার করতে পারেন I অতএব, যারা উত্তরাধিকারীর অধীনে অধিকার দাবী করেছেন, তারা উত্তরাধিকারের ভিত্তিতে সমিতির মধ্যে শেয়ারের শিরোনাম দাবী করার অধিকারী হবে।

 

মনোনয়ন এবং উত্তরাধিকারের উপর আইন

মনোনয়নের কোন সাধারণ আইন নেই, তবে মৃত ব্যক্তির ধর্মীয় বন্ধন এবং তার ইচ্ছানুযায়ী তৈরি করা উইলের দ্বারা দানের ভিত্তিতে উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে বিশেষ আইন বিদ্যমান।অতএব, নমিনির অধিকার মনোনয়নের বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণকারী আইন অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়, তবে উত্তরাধিকারীর অধিকারগুলি মৃত ব্যক্তির ব্যক্তিগত আইন অনুসারে নির্ধারিত হয়। তাই,মনোনয়ন, শুধুমাত্র  শেষ একটি উপায় নয়।

এটি একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা, যাতে উত্তরাধিকারের সমস্যা সমাধান হওয়া পর্যন্ত, মৃত ব্যক্তির শেয়ারগুলি বিনা মালিকানায় না থাকে।

(লেখক জুরিস কর্পোরেশনের একজন সহকারী)

 

Was this article useful?
  • 😃 (1)
  • 😐 (0)
  • 😔 (0)

Recent Podcasts

  • কাসাগ্রান্ড চেন্নাইতে ফ্রেঞ্চ-থিমযুক্ত আবাসিক সম্প্রদায় চালু করেছে
  • কোচি ওয়াটার মেট্রো ফেরিগুলি হাইকোর্ট-ফোর্ট কোচি রুটে পরিষেবা শুরু করে৷
  • UP মেট্রো সুবিধা সহ সর্বাধিক শহর সহ রাজ্য হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে
  • আপনার স্থান আপগ্রেড করতে মার্বেল টিভি ইউনিট ডিজাইন
  • 64% এইচএনআই বিনিয়োগকারীরা সিআরইতে ভগ্নাংশ মালিকানা বিনিয়োগ পছন্দ করে: রিপোর্ট৷
  • অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল পেইন্ট কী এবং এটি কীভাবে উপকারী?