গৃহীত ভাড়ার উপর করারোপন
ভারতের আয়কর আইনের আয়ের একটি নির্দিষ্ট খাত আছে, সেটি হল সম্পত্তির মালিক দ্বারা গৃহীত ভাড়ার উপর কর, যার নাম ‘ গৃহ সম্পত্তি থেকে আয় ‘।
সুতরাং, একটি ভাড়া দেওয়া সম্পত্তি থেকে যে ভাড়া গৃহীত হয়,সেটি করের এই খাতের অধীনে থাকে। একটি আবাসিক বাড়ি, সেইসাথে বাণিজ্যিক সম্পত্তি থেকে গৃহীত ভাড়া,এই খাতের অধীনে করযোগ্য । এমনকি,আপনার কারখানার বিল্ডিং ভাড়া দেওয়া থাকলে তার জন্য গৃহীত ভাড়া অথবা দালানের অন্তর্ভুক্ত কোন জমি থেকে গৃহীত ভাড়া, এই খাতের করের অধীনে থাকবে।
সম্পত্তি তার বার্ষিক মূল্যের ভিত্তিতে করযোগ্য। একটি সম্পত্তির বার্ষিক মূল্য, সম্পত্তি দ্বারা প্রাপ্ত ভাড়া অথবা সম্পত্তির প্রত্যাশিত ভাড়ার পরিমাণ যা যুক্তিসঙ্গতভাবে ভাড়া হিসেবে দেওয়া হত : এই দুটির মধ্যে যেটি উচ্চতর তার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়।
সুতরাং, যদি আপনি নামমাত্র পরিমান ভাড়ার জন্য একটি সম্পত্তি ভাড়া দেন, তবে এই সম্পত্তির করারোপনের পরিমান বাজার দর অনুযায়ী হবে, আপনার দ্বারা গৃহীত ভাড়ার উপর নয় । অনুরূপভাবে, যদি আপনার সম্পত্তির জন্য গৃহীত ভাড়া বাজার দরের চেয়ে বেশী হয়, তবে আপনি যে ভাড়া পাচ্ছেন তার উপর করারোপনের জন্য বিবেচনা করা হবে । দয়া করে মনে রাখবেন ভাড়া থেকে আয়ের কর ভাড়া বৃদ্ধির ভিত্তিতে হয়,আপনার প্রাপ্তির/রশিদের ভিত্তিতে নয়।
এখানে শুধুমাত্র বাড়িওয়ালা গৃহীত ভাড়ার জন্য করের আওতায় পড়বেন। তাই যদি আপনি নিজের ভাড়া নেওয়া কোনও সম্পত্তিকে আবার ভাড়া দেন , তবে এই প্রাপ্ত অর্থ ‘অন্যান্য উৎস থেকে আয়’ শিরোনামের অধীনে করযোগ্য হবে। এমনকি কোন সম্পত্তির দখলদারের দ্বারা গৃহীত ভাড়াও এই শিরোনামের অধীনে করযোগ্য হবে। এখানে মালিকানাকে ব্যাপকভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় এবং এমন অনেক মামলাও এর অন্তর্ভুক্ত করা হয় যেখানে আপনি একটি চুক্তির অংশীদারিত্বের জন্য সম্পত্তির অংশ দখল করে নিয়েছেন এবং সেখানে পণ্যটির আইনি শিরোনাম আপনার নামে স্থানান্তর নাও হতে পারে। এমনকি, আলাদা বসবাস না করে যখন কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তিকে উপহার হিসেবে স্ত্রী কে প্রদান করেন, , তখনও তিনি সম্পত্তিটির মালিক হিসাবে গণ্য করা হবেন এবং সেই অনুযায়ী কর দেবেন , যদিও তিনি এই ধরনের সম্পত্তির জন্য প্রকৃত ভাড়া নাও পেতে পারেন। অনুরূপভাবে, যদি সম্পত্তি একজন নাবালককে উপহার দেওয়া হয় তবে দানকারী অভিভাবকদের এই ধরনের সম্পত্তির জন্য কর দিতে হবে।
গৃহীত ভাড়া থেকে ছাড়
সম্পুর্ণ গৃহীত ভাড়া করযোগ্য হয় না।
সম্পত্তির জন্য গৃহীত / প্রাপ্ত ভাড়ার থেকে, আপনি সম্পত্তির জন্য প্রদেয় পৌর কর বাদ দিতে পারবেন। যেহেতু বৃদ্ধি হিসেবে ভাড়া করযোগ্য হয়,আইন আপনাকে কিছু কর ছাড় দাবি করতে অনুমতি দেয়, সেটি নির্দিষ্ট কিছু শর্তের পূর্নতার জন্য হয়ে থাকে, যা আপনি নিরুপন করতে সক্ষম হননি। উপরের দুটি কারনে মূল্য বাদ দেবার পরে, আপনি যেটা পাবেন সেটা হল সম্পত্তির বার্ষিক মুল্য,যার থেকে মেরামতি বা অন্যান্য খরচের জন্য আপনি বার্ষিক মূল্যের 30% ছাড় হিসেবে নিতে পারেন।
অনুগ্রহ করে লক্ষ্য করুন যে 30% ছাড় হলো সাধারন ছাড়ের মান , এতে আপনি পর্যালোচনা সম্পন্ন বছরের মধ্যে, সম্পত্তির জন্য মেরামত বা পুনর্নির্মাণের জন্য সত্যিই যথাযোগ্য কোনো খরচ করেছেন কিনা তা অপ্রাসঙ্গিক।
যদি আপনি সম্পত্তি ক্রয়, নির্মাণ, মেরামত / সংস্কারের উদ্দেশ্যে কোনও অর্থ ধার করে থাকেন তবে আপনি ধার করা অর্থের উপর প্রদেয় সুদেও ছাড় দাবী করতে পারেন। ধারকৃত অর্থটি গৃহঋণ না হয়ে, যে কোনও ব্যক্তির কাছ থেকে ধার করাও হতে পারেI বর্তমানে, সুদের পরিমাণে কোন সীমাবদ্ধতা নেই, যা আপনি আপনার ভাড়ার আয়ের থেকে দাবি করতে পারেন।
যাইহোক, 2017-18 এর বাজেটে ‘বাড়ির সম্পত্তি থেকে আয়’ খাতের অধীনে ক্ষতির জন্য 2 লাখ টাকা অব্দি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা আপনার অন্যান্য আয় যেমন বেতন, ব্যবসার আয় বা মূলধন লাভের বিরুদ্ধে স্থির করা যেতে পারে। এই খাতে 2 লাখ এর বেশি ক্ষতি হলে , সেটি পরবর্তী 8 বছর ধরে পরিশোধ করা যাবে I এই বিধানটি এমন ব্যক্তিদের উপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলবে, যারা টাকা ধার করে সম্পত্তি কেনে এবং সেটি পরে ভাড়া দেয় ,যেখানে মূলধনের 3% -4% হারে ভাড়া দেওয়া হয়, সেখানে এই ধরনের ঋণের সুদের হার প্রায় 9%। যেহেতু গৃহ ঋণ সাধারণত দীর্ঘকালের জন্য নেওয়া হয়, এই খাতে ক্ষতির পরিস্থিতি স্বাভাবিকভাবে দীর্ঘকাল ধরে চলতে থাকে এবং 2 লক্ষেরও বেশি অর্থের অতিরিক্ত সুদ কার্যকারীভাবে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যায় I
আপনার যদি একাধিক বাড়ি থেকে থাকে এবং নিজে যে বাড়িটিতে থাকেন, সেটিও যদি গৃহ ঋণের এর আওতায় থাকে, তাহলে এটি আপনাকে খুব জোরে আঘাত করবে, কারণ এই বিধানটির জন্য পরের বছর থেকে আপনার ব্যয়ের উপর করের মাত্রা বেড়ে যাবে I
(লেখক হলেন, 35 বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন করারোপন এবং গৃহ অর্থনীতির বিশেষজ্ঞ)